ব্রণ হলো একটা খুবই বিরক্তিকর জিনিস। এটা অনেক কারণ বশত হয়ে থাকে। ব্রণ হওয়ার কোনো একটা নির্দিষ্ট কারণ নেই। এটি অনেক কারণ এ হয়ে থাকে।
এটি হরমোন চেঞ্জের কারণে হয়ে থাকে। রাতে ঘুমনোর ব্যাঘাত ঘটলে ব্রণ হয়। শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকলে বা ভালো ভাবে পেট পরিষ্কার না হলে ব্রণ হতে পারে। এছাড়াও ঠিকমতো মুখমন্ডল এর যত্ন না নিলে অর্থাৎ মুখ পরিষ্কার না করলে ব্রণ হয়। ব্রণ হাওয়া অতি সাধারণ বিষয়। এটা নিয়ে অত চাপ নেওয়ার দরকার নেই। শুধু কিছু নিয়মে থাকতে হবে।
মুখে ব্রণ হওয়ার কারণ কী? কিসের কারনে মুখে ব্রণ হয়?
আমাদের ত্বকের নিচে একটা গ্রন্থি আছে যার নাম সেবাসিয়াস গ্রন্থি। এটার কাজ হলো একধরনের তৈলাক্ত জিনিস, সেবাম তৈরি করা। সেবাম আপনার ত্বককে তৈলাক্ত রাখে। আপনার শরীরের লোমকূপের মধ্য দিয়ে যে পানি প্রবেশ করেনা তার কারণ এই সেবাম। এটা আপনার শরীরের চামড়ার নিচে থাকা মৃত কোষ গুলোকেও বের করে দেয় লোমকূপের মধ্য দিয়ে।
তো বাচ্চারা যখন কিশোর কিশোরী তে পরিণত হয়, কিছু হরমোনের কারণে এই সেবাসিয়াস গ্রন্থি প্রয়োজনের অতিরিক্ত সেবাম তৈরি করে। এতে লোমকূপগুলো বন্ধ হয়ে যায়, ভেতরে আটকে থাকে মৃত কোষ, ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন তৈরি করে, আর তখনই ত্বকের উপরিভাগে ব্ল্যাকহেড, হোয়াইট হেড, পিম্পল নামের বিভিন্ন রকমের ব্রণ দেখা যায়।
তো থেকে বাঁচতে কি করণীয়, ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে। দিনে কয়েকবার পানি দিয়ে, দুই এক বার বেবি সোপ দিয়ে মুখমন্ডল ধুয়ে নিতে হবে। ব্রণ গুলোকে হাত বা অন্য কিছু ব্যবহার করে খোঁচাখুঁচি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর অতিরিক্ত বেশি মনে হলে চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
যেহেতু ত্বকে তেলের উপস্থিতি একটা কারণ, তাই তেল যুক্ত খাবার একটু কম খাওয়া ভালো। প্রচুর পানি, শাকসবজি ফলমূল খাওয়া চাই। যে কোনোভাবেই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে।
বয়সন্ধিকালে মুখে ব্রণ দেখা যাবেই, এবং এটা খুব স্বাভাবিক।
কী কী নিয়ম মেনে চললে মুখের ব্রণ কমে যাবে? মুখের দাগ বা ব্রণ ভালো করার উপায় কী?
মুখের ব্রণ অর্থাৎ Pimple একটি হরমোনজনিত শারীরিক পরিবর্তন | হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে অনেক ধরণের শারীরিক উপসর্গই দেখা দিতে পারে, যেমন মাথার চুল পরে যাওয়া, ওজন বেড়ে যাওয়া অথবা কমে যাওয়া, মুখে তেল জমা ইত্যাদি |
কিন্তু হরমোনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয় | যেমন নিয়মিত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার, শারীরিক ব্যাম, মেডিটেশন, ভালো ঘুম এসব মানুষের হরমোন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে | মোট কথা মানুষের জীপনযাপনের ধরণের উপর তার শারীরিক পরিবর্তন নির্ভর করে |
এখন মুখের ব্রণ হয়তো পুরোপুরি রোধ করে সম্ভব নয়, কিন্তু এটাকে একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে দমিয়ে রাখা যেতে পারে এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ করা যায় |
আমি চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিশেষ কোনো জ্ঞান রাখি না | কিন্তু কথাগুলো আমার নিজস্ব জীবন অভিজ্ঞতা থেকে বলছি | আমার মতে বয়োসন্ধির শুরু থেকে এ নিয়মগুলো মেনে চললে ব্রণ এবং অনেক অপ্রত্যশিত চর্মরোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায় |
১) পরিমিত পরিমান বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে |
২) তৈলাক্ত এবং চর্বিযুক্ত খাবার একেবারে এড়িয়ে চলাই ভালো |
৩) খাবারের মেনুতে শাক সবজি রাখতে হবে | নিয়মিত ভিটামিন সি এবং ডি যুক্ত খাবারও তালিকাতে রাখতে হবে |
৪) অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে হবে এবং পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে |
৫) মুখে যেকোনো নিম্ন মানসম্পন্ন বাণিজ্যিক পণ্য মাখা থেকে দূরে থাকতে হবে | আমি ব্যক্তিগতভাবে Almond oil ব্যবহার করি মুখে এবং সারা শরীরে | আর মাথায় Olive oil | আমি যদি জানি আগামীকাল পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে, তারপরও আমি এই অভ্যাস বাদ দিবো না | কথায় আছে যে মানুষ অভ্যাসের দাস |
৬) ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধৌত করতে হবে, দিনে অন্তত দুইবার | কারণ বাইরের দূষিত ধুলাবালি মুখে দীর্ঘক্ষণ এঁটে থাকলে চামড়ায় ইনফেকশন হতে পারে |
সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে ব্রণর চিকিৎসাঃ
মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে যে কোনও ফেস ওয়াশ বা ক্লিনজার দিয়ে দিনে ২–৩ বার করে মুখ পরিস্কার করতে হবে। তাতে তৈলাক্ত ভাব কমে যাবে। কিছু কিছু লাগাবার মলম আছে যা মাখলে ব্রণ শুকিয়ে যায়। যেমন, বেঞ্জোইল পারক্সাইড, রেটিনোয়িক অ্যাসিড, ইত্যাদি। তবে ব্রণ যদি খুব বেশি বড় বড় হয়ে লাল হয়ে যায় তাহলে ওরাল অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। যেমন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, ডক্সি সাইক্লিন বা মাইনোসাইক্লিন। ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমানোর জন্য বা কম ব্রণ বের হওয়ার জন্য স্পিরোনোল্যাকটোন জাতীয় ওষুধ ভাল কাজ করে। সাম্প্রতিক কালে আইসোট্রোইন (আইসোট্রেটিনোইন)নামে খাওয়ার ওষুধ খুব জনপ্রিয় হয়েছে। খুব মারাত্মক ধরনের ব্রণতে একমাত্র এই ওষুধই দাগ বা স্কারিং হওয়া বন্ধ করতে পারে। তবে এই ওষুধ কেবলমাত্র একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শেই খাওয়া উচিত।
ব্রনের ওপরে কয়েকটি টিপস দিন।
- ব্রণ হলে খোটাখুটি বা নখ লাগানো উচিত নয়
- দিনে ৩–৪ বার অয়েল ফ্রি ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধোওয়া উচিত
- মুখে ফেসিয়াল বা ব্লিচ করা উচিত নয়
- স্ক্র্যাব বা ওই জাতীয় কিছু দিয়ে মুখ ঘষা উচিত নয়
- রোদে বেরনোর আগে সান স্ক্রিন লাগানো উচিত
- ব্রণ হওয়ার শুরুতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত
- ঘরোয়া কোনও জিনিস বা রুম মেড প্যাক ব্যবহার না করাই ভাল। যতটা সম্ভব মুখকে অয়েল ফ্রি রাখা দরকার
/////////////////////////////////////////////////////////////////
১. বেশি তেলে ভাজা জিনিস খাওয়া যাবেনা। তেলে ভাজা জিনিস যত পারবেন কম খাওয়ার চেষ্টা করবেন।২.তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণর সমস্যাটা বেশি দেখা যায়। সারাদিনের এর মধ্যে মুখমন্ডলে বার বার পানি দেওয়ার চেষ্টা করবেন ।
৩. নিম জাতীয় ফেস ওয়াস ব্যবহার করলে অনেক সময় ব্রণর সমস্যা কমে যায়।
৪. সকালে ঘুম থেকে উঠে এক্সারসাইজ করার অভ্যাস করুন এবং রাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘুমিয়ে পড়ুন।
৫. ব্রণতে কখনো হাত দেবেন না । এতে মুখে দাগ বেড়ে যায়। ব্রণ আপনাপনি ঠিক হয়।
৬.দিনে অনেক বেশি করে জল খান। এটা খুব জরুরি ব্রণ দূর করার জন্য।
৭.পেট পরিষ্কার ঠিকঠাক না হলে অনেক সময় ব্রণর সমস্যা দেখা যায়। এদিকে খায়াল রাখুন।
৮.অনেক সময় আপনার ব্যাবহার করা নাইট ক্রিম বা অন্য ব্যাবহৃত ক্রিম উপযুক্ত না হাওয়ার জন্য ব্রণ হলে সেদিকে খেয়াল রাখুন। এই ব্যাপারে আপনি কোনো বিউটিশিয়ান এর কাছে পরামর্শ নিতে পারেন।
তথ্যসূত্রঃ
কৌশিক রায়
Nasrin Shabnam
Nice