বিজ্ঞানের বিস্ময়কর তথ্য এবং বিজ্ঞান কাকে বলে | Wonderful Information about of Science

124
বিজ্ঞানের বিস্ময়কর তথ্য এবং বিজ্ঞান কাকে বলে | রহস্যময় বিজ্ঞান | EduHelpZone
রহস্যময় বিজ্ঞান | EduHelpZone

প্রকৃতি এবং জগৎ অধ্যায়ন করাকে বিজ্ঞান বলে

বিজ্ঞানের প্রথম কাজ পর্যবেক্ষণ করা, দ্বিতীয় কাজ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা এবং পরিশেষে সেই তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সমস্যার ব্যাখ্যা এবং সমাধান খোঁজা । এখানে সমস্যা বলতে কোনো অমীমাংসিত প্রশ্নকে বোঝানো হয়।

 বিজ্ঞানের বিস্ময়কর তথ্য এবং বিজ্ঞান কাকে বলে | রহস্যময় বিজ্ঞান | EduHelpZone.তার মানে, এককথায় বিজ্ঞানের কাজ হলো প্রকৃতি এবং জগৎ সম্পর্কিত কোনো প্রশ্নের উত্তর খোঁজা । বিজ্ঞানের ইংরেজি শব্দ Science মূলত ল্যাটিন Scientia থেকে এসেছে, যার মানে Knowledge অর্থাৎ জ্ঞান । সেদিক থেকে বিবেচনা করলে সকল জ্ঞানই (যেমন ইতিহাস, সাহিত্য, শিল্পকলা) বিজ্ঞান হওয়ার কথা । কিন্তু দুৰ্ভাগ্যজনকভাবে Scientia শব্দটির আক্ষরিক অর্থ অনুযায়ী বিজ্ঞান সেটা নয় । কেন এগুলি বিজ্ঞানের মর্যাদা পায় না, অথবা বিজ্ঞান হলেই বা দোষ কি ছিল- সে এক দীর্ঘ আলোচনা । সেদিকে আর নাই গেলাম ।

Advertising

যাই হোক, এবার একটু গভীরে প্রবেশ করি । নিচের ছবিতে আমরা একটি ঘটনা পরিষ্কার প্রত্যক্ষ করতে পাচ্ছি । একটি সিমের চারা গাছের অঙ্কুরোদ্গম হচ্ছে, এবং এটি খুবই স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া ।

বিজ্ঞানের বিস্ময়কর তথ্য এবং বিজ্ঞান কাকে বলে | রহস্যময় বিজ্ঞান | EduHelpZone.কিন্তু নিচের এই ছবিতে একটি ভিন্ন দৃশ্য অবলোকন করছি । আমরা দেখছি গাছটির সফল অঙ্কুরোদ্গম হচ্ছে না, কোনো কারণে সে থেমে যাচ্ছে ।

বিজ্ঞানের বিস্ময়কর তথ্য এবং বিজ্ঞান কাকে বলে | রহস্যময় বিজ্ঞান | EduHelpZone.কেন স্বাভাবিক অঙ্কুরোদ্গম হচ্ছে না, এটি আপাত দৃষ্টিতে একটি অমীমাংসিত রহস্য । বিজ্ঞানের কাজ হচ্ছে এই “কেন’’ প্রশ্নের উত্তর বের করা এবং ঘটনাটির একটি ব্যাখ্যা দেওয়া ।

কমন সেন্স থেকে ধরে নেয়া যায়, এই প্রশ্নের উত্তর বের করার জন্য রসায়ন বিজ্ঞান, মৃত্তিকা বিজ্ঞান এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞানের সাহায্য দরকার । একজন রসায়ন বিজ্ঞানী অথবা একজন মৃত্তিকা বিজ্ঞানী যিনি মাটির রাসায়নিক উপাদান, গঠন এবং মাটিতে উপস্থিত উদ্ভিদের পুষ্টিগুণাগুণ নিয়ে কাজ করেন তার পর্যবেক্ষণ এবং যৌক্তিক বিশ্লষণের মাধ্যমে হয়তো এ ঘটনার সঠিক কারণ জানা যেতে পারে । অন্যদিকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীও ওই বীজ নিয়ে গবেষণা করে সেটার একটা ফলাফল বের করতে পারে ।

তাহলে বোঝা গেলো পর্যবেক্ষণ, এবং তথ্য-উপাত্তের সুক্ষ বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক কোনো রহস্যের সমাধান বের করাই বিজ্ঞান।

এবার অন্য উদাহরণে আসা যাক । এই ছবিটি চর্ম রোগে আক্রান্ত একটি শিশুর । ছবিতে বোঝা যাচ্ছে ওর জল বসন্তে জাতীয় কোনো রোগ হয়েছে । কিন্তু আলোচনার সুবিধার্তে ধরে নেয়া যাক ওর এই চর্মরোগটি অজানা ।

বিজ্ঞানের বিস্ময়কর তথ্য এবং বিজ্ঞান কাকে বলে | রহস্যময় বিজ্ঞান | EduHelpZone.একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানী শিশুটিকে পর্যবেক্ষণ করবে, এরপর প্রয়োজনীয় তথ্য জোগাড় করবে (যেমন রোগটি কতদিন যাবৎ, শিশুটি কেমন অনুভব করে, কোনো নির্দিষ্ট খাবারের পর প্রভাব পড়েছে কিনা ইত্যাদি) । পাশাপাশি চিকিৎসক হয়তো কিছু শারীরিক পরীক্ষাও করতে পারেন । এভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণের শেষে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তিনি শিশুটিকে উপযুক্ত রোগ নিরাময়কারী কোনো প্রতিষেধক প্রয়োগ করবেন । এটাই (চিকিৎসা) বিজ্ঞান ।

উপরের উদাহরণগুলোতে সমস্যা সমাধানের যে মৌলিক যৌক্তিক পদক্ষেপগুলো বলা হয়েছে বিজ্ঞানের সকল শাখায়ই এর প্রয়োগ ঘটে ।

বিজ্ঞান কি সকল প্রশ্নের উত্তর একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দিতে পারে?

না ।

বিজ্ঞান যদি কোনো প্রশ্নের সমাধান বের করতে না পারে তাহলে কি বলা যায় বিজ্ঞান ব্যর্থ?

না, কারণ বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আহরণ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এবং সবক্ষেত্রে এর তাৎক্ষণিক কোনো উপসংহার টানা যায় না । দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া একটি সরল উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে ।

বব বাসা থেকে বের হয়ে কাজে যাওয়ার পথে তার মুঠোফোনটি খুঁজে পাচ্ছে না । পকেটে হাত দিয়ে দেখলো ফোনটি নেই ! বব তখন মনে মনে একটি প্রশ্ন করবে- “আমার ফোনটি কোথায় গেলো?”

বিজ্ঞানের বিস্ময়কর তথ্য এবং বিজ্ঞান কাকে বলে | রহস্যময় বিজ্ঞান | EduHelpZone.আগেই বলেছিলাম, বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আহরণের প্রাথমিক পর্যায় শুরু হয় কোনো অমীমাংসিত প্রশ্ন দিয়ে । তাহলে ববের কাজ এখন এই হারিয়ে যাওয়া ফোন খুঁজে বের করা । প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বব একটি সম্ভাব্য আন্দাজ (প্রশ্ন) করবে- “আমার ফোনটি মনে হয় গতকাল রাতে বিছানার পাশ দিয়ে পড়ে গিয়েছে ।” সর্বশেষ উত্তর খুঁজে পাওয়ার আগে এ ধরণের একটি যৌক্তিক অনুমান করাকে হাইপোথিসিস (Hypothesis) বলে । বিজ্ঞানের সকল সমস্যার ক্ষেত্রে হাইপোথিসিস দরকার হয় না ।

এখন, বব যদি বাসায় গিয়ে বিছানার পাশে ফোনটি খুঁজে না পায়, তাহলে সে আরেকটি হাইপোথিসিস টানবে । আর যদি খুঁজে পায় তাহলে তো কথাই নেই, সে তার সমস্যার সমাধান পেয়ে গেলো । ধরা যাক ববের প্রথম হাইপোথিসিস প্রমাণিত হয় নি, তাহলে দ্বিতীয় হাইপোথিসিস হতে পারে- “বোধহয় ফোনটি টেবিলের নিচে রাখা আছে । ”

এভাবে যতক্ষণ পর্যন্ত বব তার সমস্যার সমাধান না পাবে ততক্ষন সে নতুন হাইপোথেসিস তুলবে এবং এটার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে থাকবে । বিজ্ঞানেও ঠিক এমনটি ঘটে ।

বিজ্ঞানের সাথে গণিতের সম্পর্ক কি ?

গণিত হচ্ছে বিজ্ঞানের ভাষা । বিজ্ঞানের প্রাপ্ত ফলাফল গণিত (গাণিতিক সমীকরন) -এর মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় । ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন এর বয়স যখন ২৬ বছর তখন তিনি পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ক তিন পাতার একটি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন । তিনি বোঝাতে চেয়েছেন কোনো বস্তুর শক্তি (EE) তার ভর (mm) এবং আলোর গতিবেগের (cc) গুণফলের সমান । অর্থাৎ বস্তুর ভরকে আলোর বেগের বর্গ দিয়ে গুন করলে সেটার শক্তি বের করা যায় । একটু ঘুরিয়ে বললে, যেহেতু আলোর বেগ একটি ধ্রুবক (অপরিবর্তনশীল), সেহেতু কোনো বস্তুর নিজস্ব শক্তি সেটার ভরের সমানুপাতিক ! এটাকে গাণিতিক সমীকরণে রূপান্তর করলে হয় E=mc2E=mc2 ।

বিজ্ঞানের বিস্ময়কর তথ্য এবং বিজ্ঞান কাকে বলে | রহস্যময় বিজ্ঞান | EduHelpZone.তাই বলা যায় গণিত হলো বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব অথবা ফলাফল বর্ণনা করার একটি পন্থা ।

বিজ্ঞানের আবিষ্কারে গণিতের ব্যবহার শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয় । যেহেতু বিজ্ঞান এক প্রকার সুসংবদ্ধ জ্ঞান এবং যৌক্তিক বিশ্লেষণ তাই সমস্যার ব্যাখ্যা প্রদান করার জন্য সঠিক পরিমাপ এবং সূক্ষ্ণ হিসাবের দরকার হয় । উপরে আমি হাইপোথিসিস এর কথা উল্লেখ করেছিলাম । হাইপোথিসিস প্রমান করার জন্য বিভিন্ন ধরণের অনুসন্ধান (Experimentation) প্রয়োজন । এসব অনুসন্ধান চালানোর জন্য অনেক ধরণের পদ্ধতি আছে, যেগুলোকে রিসার্চ মেথডোলজি (Research Methodology) বলা হয়ে থাকে ।

বিজ্ঞানের বিস্ময়কর তথ্য এবং বিজ্ঞান কাকে বলে | রহস্যময় বিজ্ঞান | EduHelpZone.অনেক সময় আবার একটি হাইপোথিসিস প্রমান করার জন্য অনেকগুলো অনুসন্ধান করার দরকার হতে পারে । সেক্ষেত্রে অনুসন্ধানে প্রাপ্ত ফলাফলগুলোর মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণও করা হয় । তাহলে বোঝা গেলো সকল ক্ষেত্রেই উপযুক্ত ফলাফল পাওয়ার জন্য সতর্কতার সাথে গণিত ব্যবহার করে হিসাব-নিকাশ করতে হয় । সেজন্য বলা যায় গণিত হলো বিজ্ঞানের মেরুদন্ড ।

একেবারে সবশেষে আমি এটুকুই বলবো, বিজ্ঞান হচ্ছে নিচের ছবির মতো এরকম কিছু !

বিজ্ঞানের বিস্ময়কর তথ্য এবং বিজ্ঞান কাকে বলে | রহস্যময় বিজ্ঞান | EduHelpZone.বিজ্ঞান হলো প্রকৃতিতে কোনো ঘটনায় বিস্মিত হওয়া, এবং প্রশ্ন করা- কেন আপেলটি উপরে না গিয়ে নিচে মাটিতে পড়লো ?

 

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here