নিজেকে মূল্যায়ন করুন । আয়েশ আর অর্জন এক পথে চলে না। উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা

131
নিজেকে মূল্যায়ন করুন । আয়েশ আর অর্জন এক পথে চলে না

 

কেউ যদি জিগ্যেস করে, আপনার জীবনের লক্ষ্য কি? গলা হাঁকিয়ে বলে দেন- বিজনেস ম্যান, মাল্টি-ন্যাশনালে চাকরি, গাড়ি, বাড়ি, ইত্যাদি। কিন্তু ভুলেও কখনও বলেন না আপনার জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে- রাত জেগে প্রিমিয়ার লীগের খেলা দেখা, কে কয়টা গোল করছে তার হিসাব রাখা, ঘন্টার পর ঘন্টা ফেইসবুকের হোমপেইজে স্ক্রল করা। অথচ দিনের পর দিন এই কাজগুলা করেই, স্বপ্ন অর্জন আর বাস্তবতার মধ্যে গ্যাপ বাড়িয়ে নিচ্ছেন। সেই গ্যাপ বাড়তে বাড়তে স্বপ্নটা এত দূরে চলে গেছে যে, খালি চোখে আর দেখা যায় না। হাবিজাবি কাজগুলা রেগুলারলি করে যেতে পারলেও, ডেইলি বিশ-পঁচিশ মিনিট সময় ম্যানেজ করতে পারেন না। নিজের জন্য, নিজের স্বপ্নের জন্য।

নিজেকে মূল্যায়ন করুন । আয়েশ আর অর্জন এক পথে চলে না

Advertising

 

পরিচিত কেউ মারা গেলে, আমরা প্রায়ই বলি, উনি জনপ্রিয় শিক্ষক বা গরিবের ডাক্তার অথবা ভালো লিডার কিংবা সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। একবারও কি চিন্তা করে দেখছেন? আজকে যদি আপনি মারা যান, আপনার সম্পর্কে লোকজন কি বলবে? কিংবা এই আপনিই, আপনার মৃত্যুর পর নিজেকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? আপনি কি চান লোকজন আপনাকে চিনুক- ক্যান্ডি ক্রাশের ১০০ লেভেল পার করে, গেইম অফ থ্রোনের সবগুলা এপিসোড তিনবার করে দেখে, দুনিয়ার সবগুলা ওয়ানডে-টেস্ট ম্যাচের পরিসংখ্যান মুখস্থ করে, তিন চারটা অনলাইন পত্রিকার চিপা-চাপার সব নিউজ জানা সফল মানুষ হিসেবে? নাকি চান, আপনাকে অন্য কিছু হিসেবে চিনুক? সেটাই যদি হয়, সেটার পিছনে কি সময় দিচ্ছেন?

কোন একটা কিছু করতে গেলে, কাজ করার উপায় বের করার আগেই, ছুতার বস্তা নিয়ে বসি। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে, বছরের পর বছর একই ছুতা দিয়ে, জীবন পার করে দিচ্ছি। আমারে কেউ সুযোগ করে দিচ্ছে না, কম্পিটিশন বেড়ে গেছে, দেশে ভালো মানুষের ভাত নাই বলে বলে নিজের ভিতরে আক্ষেপ বাড়াচ্ছি। বৃষ্টি বেশি, গরম বেশি, জ্যাম বেশি, পেটের ভিতরে গ্যাস বেশি, বলতে বলতে হাত পা ছেড়ে আপনি যখন হতাশ হয়ে বসে থাকেন, সেই একই সময়ে অন্য আরেকজন ঠিকই, শীত-গরম, বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে এগিয়ে যাচ্ছে। ক্লাসে টিচার ভালো পড়াইতে পারে নাই বলে, টিচারের চৌদ্দ গোষ্ঠীরে দশ ঘন্টা গালি দিতে দিতে আপনি যখন চোয়াল ব্যথা করতেছেন, সেই একই সময়ে আরেকজন গুগলে সার্চ মেরে, লাইব্রেরীতে স্টাডি করে এ প্লাস ঠিকই পেয়ে যাচ্ছে। আমি-আপনি যতই ছুতা নিয়ে বসে থাকি না কোনো, দুনিয়ার সবাইরে ছুতা মার্কা পাবলিক বানাইতে পারবো না। কেউ না কেউ, কোথাও না কোথাও আমাদের চাইতে খারাপ কন্ডিশনে থেকেও আমাদের চাইতে যোজন যোজন দুরুত্ব এগিয়ে যাচ্ছে। সঠিক ইচ্ছা, সাধনা আর শ্রম দিয়ে। আমাদেরকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে।

নিজেকে মূল্যায়ন করুন । আয়েশ আর অর্জন এক পথে চলে না

 

শুধু ট্যালেন্ট দিয়ে সব হয়ে গেলে, যে ফার্স্ট হয় তাকে ক্লাসে যাওয়া লাগতো না। এক সপ্তাহ হাসপাতালে ঘুরাঘুরি করে ডাক্তার হওয়া গেলে, পাঁচ-ছয় বছর ধরে, মোটা মোটা বই কেউ পড়তো না। তিন-চারবার ব্যর্থ হয়ে ছেড়ে দিলে, সেরা ক্যাপ্টেনের দেখা বাংলাদেশ পেতো না। দুনিয়ার কেউই শর্টকাটে সফল হতে পারে না। তুমিও পারবে না। তাই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখো না। সফল হতে হলে চেষ্টা করতে হবে। সাধনা করতে হবে। ভোর হওয়ার আগেই যে সাধনা শুরু করবে, রাত গভীর হওয়ার পরেও যার চেষ্টা চলতে থাকবে, সে সফল হবেই।

দুনিয়াতে ট্যালেন্ট বলতে কিছু নেই। পরিশ্রমী পোলাপান দিনের পর দিন সাধনা করে যে দক্ষতা, জ্ঞান অর্জন করে, আইলসা পোলাপান সেটাকেই ট্যালেন্ট বলে। সেজন্যই সারা বছর লাড্ডু মেরে, লাস্ট দুই সেমিস্টারে সিজিপিএ ৩.০ এর উপরে তুলতে দিশেহারা হয়ে, বোম্বল মার্কা স্টুডেন্টরা শুধুমাত্র কঠোর পরিশ্রম দিয়ে, এক সেমিস্টারে ৩.৭৫ এর উপরে জিপিএ পেয়ে, ট্যালেন্ট এর তকমা কিনে ফেলতে পারে। আবার কলেজের মেরিটোরিয়াস স্টুডেন্টটা ভার্সিটিতে গিয়ে চার সাবজেক্টে ফেল করে, ট্যালেন্ট এর মেডেল হারিয়ে ফেলে। সো, ট্যালেন্ট কিচ্ছু না। Only পরিশ্রম is real। তাই আজকের পর, “ওর ট্যালেন্ট আছে বলে পারছে, আমার ট্যালেন্ট নাই বলে পারবো না”- এমন কথা বলবা না। থাপ্পড়ের চোটে চোয়ালের দাঁত একটাও থাকবে না।

নিজেকে মূল্যায়ন করুন । আয়েশ আর অর্জন এক পথে চলে না

আয়েশ আর অর্জন এক পথে চলে না। অলসতা সফলতার বন্ধু হতে পারে না। ৫০ টা জিনিসে সময় অপচয় করলে, কোনটাতেই বস হতে পারবে না। মনোযোগ কেড়ে নেয়, এমন সব জিনিসগুলাকে স্টপ করাতে না পারলে, তারাই তোমার সফলতাকে স্টপ করে দিবে। তাই, একটা লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আজকের দিনে কি কি করতে পারবা সেটাতে ফোকাস করবে। লক্ষ্যটা যত কঠিন হবে, চেষ্টার পরিমাণ তত বেশি হতে হবে। সবসময় নিজের সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে চেষ্টা করতে হবে। ঘাম যত বেশি ঝরাবা, তত দ্রুত এগিয়ে যাবা। এগিয়ে যেতে চাইলে বাধা আসবে, উষ্ঠা খাবে। তবে যত বেশি উষ্ঠা খাবে, উষ্ঠা এভোয়েড করার তত বেশি অপশন জেনে যাবে। তখন সিনেমা, আড্ডা, মাস্তির চাইতেও চেষ্টা করার মাঝে বেশি আনন্দ খুঁজে পাবে। এভাবে চলতে চলতে, একসময় নিজের অজান্তেই সফল হয়ে যাবে।
লেখকঃ Jhankar Mahbub

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here