মাথার খুশকি দূর করার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় কী? চুলের খুশকির দূর করার সহজ উপায়। খুশকির সমস্যার ঘরোয়া সমাধান

109
মাথার খুশকি দূর করার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় কী চুলের খুশকির দূর করার সহজ উপায়। খুশকির সমস্যার ঘরোয়া সমাধান

চুলের খুশকির দূর করার সহজ উপায়। খুশকির সমস্যার ঘরোয়া সমাধান

নানা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে ঘরে বসেই বেয়াড়া খুশকির লাগাম টেনে ধরতে পারেন আপনি। ছবিটি প্রতীকী।

খুশকির সমস্যায় নারী-পুরুষে ভেদ নেই। খুশকি নিয়ে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী কিংবা যুবক-যুবতী—সবাইকে দেখা যায় উশখুশ করতে। চুলের খুশকি নিয়ন্ত্রণে রাখাটা অনেকের কাছেই যেন অসাধ্য! কিন্তু নানা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে ঘরে বসেই বেয়াড়া খুশকির লাগাম টেনে ধরতে পারেন আপনি। অর্গানিক হেলথ ডটকম অবলম্বনে জেনে নিন খুশকি দূর করার কিছু সহজ উপায়।

Advertising

 

খুশকি কেন হয়?
অনেক কারণেই খুশকি হতে পারে। খুশকির সবচেয়ে সাধারণ কারণ বলা যেতে পারে সেবোরেইক ডারমাটাইটিস বা ত্বকের তৈলাক্ত ও চুলকানিপ্রবণ অবস্থাকে। এক ধরনের ছত্রাক আছে যার নাম মেলাসেজিয়া। সব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাথার খুলিতেই এই মেলাসেজিয়া ছত্রাক থাকে। মেলাসেজিয়া নতুন ত্বক কোষ জন্মাতে সহায়তা করে। কিন্তু ত্বকে ময়লা জমে তেল চিটচিটে অবস্থার মধ্যে এই ছত্রাক বিপদে ফেলতে পারে। এ অবস্থায় জন্মানো অতিরিক্ত ত্বক কোষগুলো মরে যায় এবং ঝরে পড়ে। মাথা থেকে ঝরে পড়া সাদা-হলদে খুশকি আসলে আমাদের ত্বকের মৃত কোষ। তবে, মাথা ছাড়াও বাহুমূল, ঊরুসন্ধিসহ শরীরের অন্যত্রও খুশকি হতে পারে।
এ ছাড়া শুষ্ক ত্বকও খুশকির একটা সাধারণ কারণ। শুষ্ক ত্বকের ছোট ছোট মৃত কোষ খুশকি তৈরিতে সহায়তা করে। তবে, এ কারণে খুশকি হলে তা আপনি এমনিতেই টের পাবেন, কেননা মাথা ছাড়াও শরীরের অন্যত্রও শুষ্ক ত্বকের নমুনা দেখা যাবে। তবে, খুশকি হলে দ্রুত তার প্রতিকার করা দরকার। নইলে এই সমস্যা থেকে চুলপড়াসহ নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে। এখানে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে ঘরে বসেই খুশকির প্রতিকারের কিছু উপায় তুলে ধরা হলো।

জলপাই তেলঃ
খুশকির সমস্যা দূর করতে জলপাই তেল বা অলিভ অয়েলের ব্যবহার নানা দেশে খুবই জনপ্রিয়। নিয়মিত জলপাই তেল ব্যবহারে খুশকি কমে। কারণ জলপাই তেল প্রাকৃতিকভাবেই ভালো ময়েশ্চারাইজার এবং ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে বা ত্বকের আর্দ্রতা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে।

কর্পূর ও নারকেল তেলঃ
নারকেল তেল ও কর্পূ‌রের তেল নানা ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ। আধা কাপ নারকেল তেলের মধ্যে এক চা-চামচ কর্পূ‌রের তেল নিয়ে একটা বোতল বা পাত্রে রাখুন। খেয়াল রাখতে হবে যাতে বোতলের মুখ ভালো করে লাগানো থাকে বা পাত্রটির ঢাকনা ঠিকঠাক আটকানো থাকে, যাতে ভেতরে বাতাস না ঢোকে। শুষ্ক স্থানে এভাবে রাখা পাত্র থেকে কিছুটা তেল নিয়ে প্রতিরাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মাথায় দিন। মিনিট দশেক ধরে ঘষে ঘষে চুলের গোড়ায় মাখুন। সকালে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে টানা দুই সপ্তাহ ব্যবহার করে উপকার পেলে ধীরে ধীরে এটা একদিন পর পর মাখুন বা আরও কমিয়ে দিন।

 

বেকিং সোডাঃ
হালকা পানিতে মাথা ভিজিয়ে নিয়ে খানিকটা বেকিং সোডা পুরো মাথায় মেখে নিন। ভালো করে ঘষে ঘষে শ্যাম্পু না করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা মাথার খুলিতে থাকা ছত্রাক দমন করে প্রথমদিকে ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্ক করে ফেলতে পারে। কিন্তু অল্পদিনেই ত্বকে স্বাভাবিক তৈলাক্ত অবস্থা ফিরে আসবে। কিন্তু এ সময়ে আপনি খুশকি থেকে মুক্তি পাবেন।

 

লেবুর রসঃ
দুই টেবিল-চামচ লেবুর রস নিয়ে পুরো মাথায় চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে মাখুন। পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এবার এক টেবিল-চামচ লেবুর রস নিয়ে এক কাপ পানিতে মেশান। লেবুর রস মেশানো পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। খুশকি না কমা পর্যন্ত প্রতিদিন এভাবে লেবু চিকিৎসা চালিয়ে দেখতে পারেন।

 

ঘৃতকুমারীঃ
খুশকি ভরা মাথায় ঘৃতকুমারীর রস মেখে নিলে দারুণ আরাম পাবেন। খুশকির জ্বালায় দিনরাত চুলকানো থেকে খানিকটা ছুটিও দেবে ঘৃতকুমারীর রসের শীতল আরাম। এই উদ্ভিদ রসের সমৃদ্ধ উপাদানগুলো আপনার ত্বকের অনেক সমস্যাই দূর করবে।

মেথি-তেলঃ
সাধারণ নারকেল তেলের সঙ্গে মেথি মিশিয়ে কয়েকদিন বোতলে রেখে দিন। নিয়মিত এই মেথি মেশানো তেল মাখুন মাথায়। রাতে মেখে সকালে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে মাথার চুল ও ত্বক দুইই ভালো থাকবে। খুশকি থেকেও রেহাই পাবেন।

 

লবণঃ
প্রতিদিনই কাজে লাগা লবণের অনেক ব্যবহারই হয়তো আমরা জানি না। মাথায় হালকা করে লবণ ব্যবহার করে দেখুন। প্রাকৃতিক পরিষ্কারক হিসেবে লবণ খুশকি দূর করতে দারুণ কাজ করবে। হালকা করে লবণ ব্যবহার করে তারপর শ্যাম্পু করলে শ্যাম্পুর পুরো সুবিধা আপনি কাজে লাগাতে পারবেন। এ ছাড়া চুলকাতে থাকা খুশকি ভরা মাথায় লবণ-চিকিৎসা দারুণ প্রশান্তিও দেবে আপনাকে।

 

main qimg 07dc74d6a4bf6811b59183b1fe32acc4

 

এছাড়াও

সতর্কতা :

খুশকি মুক্ত চুলের জন্য নিয়মিত পরিচর্যা প্রয়োজন।
চুল পরিস্কার রাখুন। একই সঙ্গে চিরুনি, ব্রাশ, তোয়ালে, বালিশের কাভার, বিছানার চাদর-এগুলো পরিস্কার রাখুন।
কখনোই অন্যের এ জিনিসগুলো ব্যবহার করবেন না।
নিজেরটাও করতে দেবেন না।
মাসে একবার পার্লারে গিয়ে হেয়ার ট্রিটমেন্ট করান কিংবা হেয়ার স্পা করুন।
দিনে আট গ্লাস জল খান।
এক দিন পর পর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
ধুলাবালি থেকে চুল বাঁচিয়ে চলুন।

যা করা উচিত : যখন শীতকাল।
এ সময় মাথার ত্বক শুস্ক হয়ে যায়।
ফলে দেখা দেয় চুলের নানান সমস্যা।
অনেকেই ভালো করে চুল পরিস্কার করেন না।
যার কারনে খুশকি মাথায় জমে।
খুশকি দূর করতে হেয়ার ট্রিটমেন্ট করাটা জরুরি।
এটি আপনি বাসায় বা পার্লারে গিয়েও করতে পারেন।
কারণ বাড়িতে করলে অনেক ঝাক্কি-ঝামেলা থেকে রেহাই পাবেন।

 

ট্রিটমেন্ট করার কিছু টিপস :

১. প্রথম কুসুম গরম তেল (সেটা নারিকেলও হতে পারে) এ তুলো ডুবিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন।

২. চুলের প্রত্যেকটি গোড়ায় ভালোমতো তেল ম্যাসাজ করা হয়ে গেলে হালকা গরম জলেতোয়ালে চুবিয়ে মাথায় ১০ মিনিট গরম ভাবটা নিতে হবে। এভাবে দুইবার ভাব নেবার পর ধীরে ধীরে ভালোমতো চুল আচড়াতে হবে।

৩. গরেম ভাপের কারণে মাথার ত্বকের খুশকি নরম হয়ে যাওয়ায় খুশকি ঝরে পড়বে।

৪. এরপর ভালো মানের একটা অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু দিয়ে মাথাটা ভালো করে ধুয়ে নিন।

৫.শ্যাম্পু করার পর আপনার চুল সর্ম্পূন রুপে পরিস্কার করুন।হেয়ার ড্রায়ার ব্যাবহার না করে ফ্যানের বাতাসে চুল শুকিয়ে নিন।

খুশকি থেকে রেহাই পেতে: চুলে খুশকি পড়লে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান থেকেও সমাধান নিতে পারেন।যেমন

মেথি : ২/৩ টেবিল চামচ মেথি সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন খুব ভালো ভাবে পিষে নিবেন ।
তার পর এর সাথে এক টেবিল চামচ টক দই ও ১ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে রাখুন৩০/৩৫ মিনিট ।
পরে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে শ্যাম্পু করুন ।
সপ্তাহে একবার করে করুন ।

লেবু এবং রসুন: এক টেবিল চামচ লেবুর রসের সাথে দুই টেবিল চামচ রসুন পেস্ট মিশিয়ে একটি প্যাক বানান।
এই প্যাক ফ্লেক থেকে আমাদের দূরে রাখে।
রসুন প্রাকৃতিক অ্যান্টি-বায়োটিক যা স্কাল্পের চারপাশে থাকা ব্যাকটেরিয়ার বংশ ধংস করে ।
এই অ্যান্টিডেনড্রাফ ট্রিটমেন্ট চুলে ২০-৩০ মিনিট লাগিয়ে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।

পেঁয়াজের রস: আমরা সবাই জানি পেয়াজের রস চুল গজাতে সাহায্য করে।
এর আরেকটি গুনের দিক হল খুশকি সারাতেও কিন্তু উপকারী।
পেঁয়াজের পেস্ট মাথার তালুতে লাগিয়ে ১ ঘন্টা অপেক্ষা করুন, পেঁয়াজের ঝাঁঝলো গন্ধ যদি আপনার জন্য অস্বস্তিকর হয় তাহয়ে কয়েক ফোটা লেবুর রসও মিশিয়ে নিতে পারেন।

 

তথ্যসূত্রঃ
১। খুশকির ঘরোয়া সমাধান
২। খুশকি সমস্যার সমাধান – Bhorer Kagoj

ধন্যবাদ 😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here