সাল ২০১৬, আমি তখন অনার্স লেভেলে। লেখাপড়ায় এম্নিতেই ভালো ছিলাম তার উপর ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরাঘুরি, আড্ডা দিয়ে মোটামুটি অনেক ভালোই সময় যাচ্ছিলো আমার।
আমাদের সাথের একটা ছেলে ছিলো, ও আবার আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলো। সবাই ওরে প্রচুর লাইক করতো, কারন সব সময় হাসি-খুশি থাকতো, অলয়েজ সবাইকে গান, আড্ডায় মাতিয়ে রাখতো। হঠাৎ করে ও কেমন জানি চুপচাপ হয়ে গেলো, এক পর্যায়ে ক্লাসেও আসতো না আড্ডায়ও না।
আমরা ভাবলাম মে বি কোন ফ্যামিলি প্রবলেম তাই এমন করছে। কয়েকবার জিজ্ঞেস ও করি কিন্তু অলয়েজ হেঁসে কথা উড়িয়ে দিতো। আমি ভাবলাম হয়তো একা থাকতে চাইতেছে, থাকুক একা। আমার ভেতরে ও একটু ইগু কাজ করে, যে এত বার জিজ্ঞেস করলাম তবু বলে নাই অথচ আমাকে বেষ্ট ফ্রেন্ড বলে।
সময়টা সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখ ,আমার স্পষ্ট মনে আছে। ও সকালে আমাকে কল দেয় , আমি তখন ঘুমে। ঘুম থেকে উঠে ওর কল দেখে ভাবি নাস্তা করে কথা বলবো। কিন্তু পরে আমার খেয়াল ছিলো না। সেদিন সন্ধ্যা ৮ টার দিকে আরও একটা কল দেয় আমি তখন ফ্রেন্ডদের সাথে ক্লাবে পুল খেলছিলাম, ইচ্ছে করেই কলটা ধরি নাই। রাতে ও আমাকে ১০ টার দিকে আবার কল দেয়। কল ধরার পরেই একদম ঠান্ডা গলায় বলে
-বন্ধু তোরে খুব দেখতে মন চাইতেছে , একবার আসবি আমার বাসায়।
বাহিরে তখন প্রচুর বৃষ্টি ,আমি তখন হেঁসে বললাম,
-শালা আমি কি তোর প্রেমিক লাগি যে এত রাতে বৃষ্টির মধ্যে আমাকে তোর দেখতে মন চাচ্ছে।
তখন ও আবার সেই আগের মত শীতল গলায় বলে ,
-নারে সত্যি তোরে খুব দেখতে মন চাইতেছে আয় না একবার বাসায়।
আমি তখন আবার হেঁসে বলি ,
-আচ্ছা আসবো কালকে সকালে, প্রমিস।
আমি পরের দিন ঠিকি ওর বাসায় যাই। কিন্তু ওরে ওর বাসায় না, হসপিটালে যেয়ে দেখতে হয়। শালা অনেক দিন ধরেই Lung cancer এ ভুগতেছিলো। বেশ কিছু দিন ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত বিশ্রাম নেয়। না আমার সাথে ওর আর কোন কথা হয় নাই, জানাও হয় নাই – কি বলতে চাইতেছিল আমাকে, কেনো দেখা করতে বলেছিলো। ওর জানাজাতে যেয়েও আমি বাচ্চাদের মতো কান্না করতেছিলাম।
আমার লাইফে করা সবচেয়ে বড় ভুল হয়তো এটাই। যেই মানুষটা সব সময় শধু আমাকে নয় সবাইকেই হাসিখুশি রাখতো, সাপোর্ট দিতো সেই মানুষটার মৃত্যুর আগে আমরা ঠিক মত খুঁজ নেই নাই। আজ পর্যন্ত নিজেকে আমার অপরাধী মনে হয়। এখনো আমি সেই তারিখ গুলা, সময় গুলার কথা ভুলতে পারি না। এখনো ভাবি যে না জানি কি বলত আমাকে, ও আমাকে সত্যি নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ভাবতো। আর আমি কিনা সামান্য বৃষ্টির অজুহাতে ওকে দেখতে যাই নাই।
এই যে লিখাটা লিখছি আমার চোখ দিয়ে এখনো পানি পরছে। আমি জানি তাতে কিছুই বদলাবে না। আমি এটা মনে ও করতে চাই না, তারপর ও শেয়ার করলাম কিছু কারনে। যেনো আমার মত ভুল করে কেউ সারাজীবন আফসোস না করে।
আমরা কেউ মারা গেলে তার পিক আপ দিয়ে রেস্ট ইন পিস লিখেই কাজ সেরে ফেলি।অথছ বেচে থাকা অবস্থায় তার চার পাশটাকে শান্তিতে বেচে থাকার মতো অবস্থায় রাখতে চাই না। Rest in peace বলার আগে কাউকে live in peace এ থাকতে দেয়া উচিত।
মারা যাওয়ার পর আপনার বন্ধু, ভাইয়ের, বোনের কাছে আপনার বার্তাটা কখনোই পৌছাবে না। কিংবা শো অফ করে আপনার দেয়া পোস্ট তার কোন কাজে ও আসবে না, যে নিঃসঙ্গ হয়ে ডিপ্রেশনে ভোগে, কিংবা নানান ঝামেলার মধ্যে পরপারে যাত্রা করছে। ঠিক আমার বন্ধুর মতো, যে একবারের জন্য আমাকে দেখতে চেয়েও আমার দেখা পায় নাই।
তাই বলবো বেচে থাকা অবস্থায় একটু হলেও কাছের মানুষ গুলার খোঁজ নিন। আমাদের বয়সি ছেলে মেয়েদের বলছি,
কেউ যখন বলে “দোস্ত ফ্রি আছিস?
বোন বা ভাইটা যখন বলে- ভাইয়া তুমি কি খুব বিজি, একটু কথা ছিলো?
তখন তাকে কখনোই নিজের ব্যস্ততা দেখাবেন না।
পারলে ” শালা এটা জিজ্ঞেস করা লাগে নাকি “দাড়া আমি কল দিতেছি।
৫টা মিনিট অয়েট কর আমি মিট করতেছি এমন কিছু বলে তাকে সময় দেয়ার চেষ্টা করুন।
স্পেশালি বর্তমান সময়টা খুব খারাপ.. আপনার দেয়া একটু সময়ই হয়তো কাউকে শান্তিতে বেচে থাকার জন্য প্রেরনা দিতে পারে.. জানেন! “অভাবের চেয়ে নিঃসঙ্গতা মানুষকে অধিক ভোগায়। তাই হারানোর পর শোক দেখানোর চেয়ে বেঁচে থাকা অবস্থায় কাছের মানুষ গুলার মূল্য দিতে শিখুন”
লেখকঃ আদহাম চৌধুরী