উত্তর:
উপুড় হয়ে শোয়ার ক্ষেত্রে ইসলামে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ মর্মে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন,
প্রত্যাত সাহাবী ইয়ায়ীশ রা. বলেন, আমার পিতা তিখফা ইবনে কায়েস আল গিফারী রা. ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন:
“আমি একদিন (ভোররাতে) মসজিদে উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে দেখলাম যে, কে যেন আমাকে পা দিয়ে নাড়াচ্ছেন আর বলছেন, হে জুনাইদিব,
إِنَّ هَذِهِ ضِجْعَةٌ يُبْغِضُهَا اللَّهُ
“শোয়ার এ পদ্ধতি আল্লাহ ঘৃণা করেন।”
আমি চোখ মেলে দেখি, সে ব্যক্তিটি হচ্ছে স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
(হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহ প্রমূখ এবং আলবানী এটিকে হাসান হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।)
আবু যার জুনদুব ইবনে জুদানাহ আল গিফারী রা. থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে উপুড় হইয়ে শুয়ে থাকতে দেখে বলেছিলেন:
إِنَّمَا هَذِهِ ضِجْعَةُ أَهْلِ النَّارِ
“এটি জাহান্নামীদের শয়ন পদ্ধতি।” (ইবনে মাজাহ হাদীস নং 3724)
(এ হাদীসটিকে ইমাম বুখারী, দারেকুতনী, ইবনে আবী হাতিম প্রমূখ মুহাদ্দিস যঈফ বলেছেন। আর আহমদ, আলবানী ও আহমদ শাকের সহীহ বলেছেন)
এই হাদিসগুলো থেকেই বুঝা যায় যে, পেটের ভরে উপুড় হয়ে শোয়া উচিত নয়।
*শোয়ার সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি কোনটি?*
শোয়ার সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হল, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যে পদ্ধতি অবলম্বন করতেন সেটা। আর তা হল, ডান হাতকে ডান গালের নিচে রেখে ডান দিকে কাত হয়ে শয়ন করা।
বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীরা ও এ ধরণের শোয়াকে স্বাস্থ্যসম্মত হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
অনুরূপভাবে কখনও কখনও চিৎ হয়ে শোয়াও জায়েজ রয়েছে। কারণ এই মর্মেও হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করীম (সা) কখনো কখনো এক পায়ের উপর আরেক পা রেখে চিৎ হয়ে শয়ন করেছেন। তিনি বিশ্রাম করার জন্য তিনি কখনো এভাবে চিৎ হয়ে শুয়েছেন।
তবে এক পাকে আরেক পায়ের উপর রেখে সতরকে পরিপূর্ণ হিফাজতে রেখে শুতে হবে। চিৎ হয়ে শুতে গিয়ে সতর বা লজ্জা স্থান খুলে যাওয়ার আশংকা থাকলে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। মোটকথা, লজ্জা স্থান যেন প্রকাশিত না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রেখে কখনও কখনও চিৎ হয়ে শয়ন করা জায়েজ রয়েছে।
ইমাম ইবনে কাইয়েম রহ.বলেছেন, “বাম দিকে অথবা পেটের উপর ভর করে শয়ন করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।”
সারাংশ:
শোয়ার সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল, ডান পাশে ফিরে ডান হাতকে ডান গালের নিচে রেখে কাৎ হয়ে শয়ন করা উত্তম।
তবে কখনো কখনো চিৎ হয়ে শোয়াও জায়েজ রয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে লজ্জা স্থান যেন প্রকাশিত না হয়ে যায় সে দিকে সর্তকতা অবলম্বন করা অপরিহার্য।
পেটের উপর ভর করে উপুড় হয়ে শয়ন করা ঠিক নয়। কেননা, হাদীসে এটিকে আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয় ও জাহান্নামিদের শয়ন পদ্ধতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আর বাম পাশে কাত হয়ে শোয়া উচিৎ নয়। কারণ তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।
এ ক্ষেত্র নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য একই বিধান।
প্রিয় নবী সা. এর অনুসরণেই আমাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে অবারিত কল্যাণ নিহীত রয়েছে। তাঁর আদর্শের বাইরে রয়েছে কেবল ক্ষতি ও দুর্দশা। আল্লাহ আমাদেরকে নবী সা. এর অনুসরণে জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম।
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।
এখানে শোয়া নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, আশা করি বিস্তারিত লিখাটি আপনার উপকারে আসবে।
Related Articles: পেট নিচের দিকে রেখে উপুড় হয়ে শোয়া বা ডান কাতে শোয়া নিয়ে ইসলাম কি বলে? ইসলামে শোয়ার সঠিক নিয়ম কোনটি বিস্তারিত আলোচনা
sundor kotha
dhonnobad vai