বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন নতুন অধ্যাপক তাঁর ক্লাস নিতে শুরু করলেন।
যে মুহুর্তে তিনি পড়ানোর জন্যে ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে ঝুঁকলেন, সেই সময় ছাত্রদের মধ্যে কেউ একজন সিনেমা হলের মতো জোরে শীষ বাজালো।
অধ্যাপক ঘুরে ক্লাসের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, –কে, কে শীষ দিয়েছে? কে সিটি মারলো?
কেউ উত্তর দিলো না। সবাই চুপ।
অধ্যাপক শান্তভাবে চকটি টেবিলে রেখে বললেন, আজকে আর লেকচার দেবো না। তবে তোমাদের একটি গল্প বলব বাকি সময়টুকুর জন্য।
সবাই আগ্রহী হয়ে নড়েচড়ে বসলো। অধ্যাপক গল্প শুরু করলেন।
— গতকাল রাতে আমি ঘুমানোর জন্য খুব চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ঘুম আমার চোখ থেকে কয়েক মাইল দূরে আছে মনে হলো। ভাবলাম, ঘুম যখন আসছে না আমার গাড়িতে রাতে পেট্রোল ভরে রাখি, যা কাল সকালের ভিড়ে আমার সময় বাঁচাবে এবং তারপর নির্ভীঘ্নে আমি ঘুমাতেও পারবো।
গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে ট্যাঙ্কটি ফুল করে নেয়ার পরে দেখি রাস্তা খালি। বাতাসটিও ঠান্ডা, আকাশে হালকা মেঘের আড়ালে আধো চাঁদ, তাই ভাবলাম একটু আশেপাশে ঘুরেই আসি।
একটু সামনে এগুতেই হঠাৎ রাস্তার পাশের কোণে আমি একজন ভদ্রবেশী তরুণী মেয়েকে দেখলাম আলো আঁধারীতে দাঁড়িয়ে আছেন অসহায় ভঙ্গী নিয়ে। বিউটিফুল ফিগার, যেই রকম সুন্দরী সেই রকম সুন্দর পোশাক তাঁর। পোশাকটি দেখে মনে হচ্ছিলো তাঁর রূপের সঙ্গে ম্যাচ করে কোন নিপুণ শিল্পী এরকমটি বানিয়েছেন। নিশ্চয়ই কোনও পার্টি থেকে ফিরে আসছেন এই ফুলপরীটি। আমি চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। মনে হলো প্রথম নজরেই প্রেমে পড়ে গেছি।
সৌজন্যতাবোধ হারিয়ে আমি আমার গাড়িটি ঘুরিয়ে তার পাশে থামিয়ে কাঁচ নামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি কোনো সহায়তা করতে পারি আপনাকে? যদি কোন সাহায্য করতে পারি তবে বলুন।
তরুণীটি হেসে উঠলো সলজ্জভাবে, তাঁর শুভ্র দন্ত রাজীর ঝিলিক দেখে মনে হলো যেন সন্ধ্যাতারা রাস্তার কোণে নেমে এসেছে।
তিনি মৃদুভাবে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি তাকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিতে পারি? তাঁর গাড়িটি আসবে না কারণ স্টার্ট নিচ্ছেনা বলে জানিয়েছে তার ড্রাইভার, আর সে কোন ট্যাক্সিও পাচ্ছে না অনেক্ষণ ধরে।
আমার হার্টবিট বেড়ে গেলো, আমি গাড়ি থেকে নেমে সামনের দরজা খুলে দিলে তিনি আমার সাথে সামনের সিটেই বসলেন সানন্দে।
আমি তাকে নিজের পরিচয় জানিয়ে বললাম, আমি আপনাদের বাসার এলাকারই পাশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
উনি উনার পরিচয় জানালে আমরা কথা বলতে শুরু করলাম এবং অবাক হয়ে দেখলাম সে খুবই বুদ্ধিমতী এবং যেকোন টপিক নিয়ে আলোচনা করি, সবগুলিতেই তার প্রভূত জ্ঞান আছে যা আজকালকার অনেক যুবকেরই নেই।
অনেক দূরে তার ঠিকানায় যখন পৌঁছলাম, তিনি আমার বিনীত প্রকৃতি ও সুন্দর আচরণের প্রশংসা করে বললেন, আমরা দুজনেই মুক্তমনের মানুষ, আমাদের আবার দেখা হতে পারে, এবং লজ্জাবতী পাতার মতো গুটিয়ে না গিয়ে বলেই ফেললেন, আমার মতো একজন যুবক ছিল তার কল্পনায়। রাখঢাক না করেই জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি বিবাহিত? আমি বুঝে ফেললাম, তিনিও প্রথম দর্শনেই আমার প্রেমে পড়েছেন।
আমি বললাম, আপনার অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে প্রথমেই আমি গাড়ি ঘুরিয়েছিলাম, এইরকম একজন রাজকন্যার স্বপ্ন আমি দেখতাম, যে দেখতে ঠিক আপনার মতো হবে এবং আমি ভাবতাম তাকেই আমি বিয়ে করবো। তারপর আপনার নলেজ, বুদ্ধি ও কথার গভীরতা শুনে আমি খোলাখুলি বলছি, ইতিমধ্যে আমিও আপনার গভীর প্রেমে পড়ে গেছি।
মেয়েটি বললো, আসুন আমাদের এপার্টমেন্টে, চা খাবেন ও আরো কিছুক্ষণ গল্প করা যাবে।
প্রেম যখন প্রকাশিত হয়েই গেছে দুই তরফে আর দ্বিধা কেন, ওর বাসায় চলে গেলাম।
আরো কিছুক্ষণ গল্প করে বিদায় নেয়ার সময় সে আমাকে বললো: শোনো, আমার ভাই তোমারই ছাত্র হবে, ও এখন বাসায় নেই। তুমি ওর দিকে একটু খেয়াল রেখো, দেখো যাতে ঠিকমত পড়াশুনা করে। এখন থেকে যেহেতু আমরা দীর্ঘ সম্পর্কের মধ্যে থাকবো, এটি তোমার দায়িত্ব হয়ে গেল।
আমি বললাম, তোমার ভাই ছাত্রটির নাম কি?
আমার নব্য প্রেমিকা বললো, তুমি আর আমি পরস্পরকে আমাদের প্রখর বুদ্ধির কারণে স্বল্প সময়ে ভালোবেসে ফেলেছি। তুমি তোমার বুদ্ধি দিয়ে খুঁজে পাবে তাকে, তাই নাম বললাম না। আমার ভাইয়ের একটা বৈশিষ্ট্য আছে যা দিয়ে তাকে চিনতে পারবে। পারবে তো?
বললাম, — আচ্ছা, কি সেই বৈশিষ্ট্য?
প্রেমিকা বললো, — সে প্রায়ই হটাৎ জোরে শিষ দেয়!
পুরো ক্লাসের সমস্ত চোখ তৎক্ষণাৎ যে ছেলেটি শিষ দিয়েছিল তার দিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে রইলো।
অধ্যাপক ধীরে চকটি আবার হাতে উঠিয়ে নিয়ে গম্ভীরভাবে বললেন: “আমি মনোবিজ্ঞানে আমার পিএইচডি ডিগ্রিটি কিনিনি, আমি এটি অর্জন করেছি।”